করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পেতে নিবন্ধনের জন্য সরকারের আইসিটি বিভাগের তৈরি করা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ উন্মুক্ত করা হচ্ছে বুধবার। এদিন থেকে শুরু হবে নিবন্ধন কার্যক্রম।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ‘এই ব্যবস্থাপনায় একটি ওয়েব পোর্টাল ও মোবাইল এপ্লিকেশনও তৈরি করা হয়েছে। করোনার টিকা নিতে ইচ্ছুকরা এই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। পাশাপাশি, টিকা সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম এই সফটওয়্যার দিয়ে করতে পারবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, সফটওয়্যারটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে পরীক্ষা করেছে। এটির সঙ্গে জাতীয় তথ্য কেন্দ্রের সংযোগ স্থাপন করা হবে। যাতে করে নাগরিকদের তথ্য যাচাই করা যায়।
জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক তারা প্রথমে সুরক্ষা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে নিবন্ধন করবেন। এজন্য তাদের একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। টিকা প্রদান সংক্রান্ত সব তথ্য এই পোর্টালের মাধ্যমেই জানা যাবে।’
ওয়েব পোর্টাল বা মোবাইল এপ্লিকেশন কোনোটিই এখনও উন্মুক্ত হয়নি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা ডেমো ভার্সন নিয়ে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী যেদিন টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন, সেদিনই এই ওয়েব পোর্টালটি উন্মুক্ত করা হবে।
‘পরবর্তীতে যদি মোবাইল অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়, সেজন্য আমরা একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ বানিয়ে রেখেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যখন চাইবে তখনই এটি উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে। তবে আইওএস ব্যবহারকারীরা এখনই কোনো অ্যাপ পাবেন না। আমরা আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্যও অ্যাপ তৈরির কাজ চলমান রেখেছি।’
যে প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুরক্ষায় নিবন্ধন করতে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ ও জন্ম তারিখ।
নিবন্ধনের জন্য যে ফরম পুরণ করতে হবে তাতে প্রয়োজন হবে মোবাইল ফোন নম্বর, শারীরিক কোনো জটিলতার তথ্য ও আগ্রহী ব্যক্তির বয়স। নিবন্ধন হয়ে গেলে টিকা প্রদানের সম্ভাব্য তারিখ জানানো হবে এসএমএসের মাধ্যমে।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ‘মুলত টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঠিক করে দেয়া ১৭ ক্যাটাগরির মানুষ অগ্রাধিকার পাবেন।
‘যাদের স্মার্ট ফোন নেই বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানেন না, তারা যেকোনো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে নিবন্ধন করতে পারবেন। ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে এ সংক্রান্ত সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি এনআইডি বা মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই নিবন্ধন করতে পারবেন। মুলত তিন ধাপে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই একজন ব্যক্তি টিকার জন্য নিবন্ধন পাবেন।’
অতিরিক্ত ব্যবহারকারীর চাপে যেন ওয়েব পোর্টালটি বসে না পড়ে এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান পলক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে যারা করোনায় ফ্রন্টলাইনার তারাই টিকা পাবেন। এরপর বয়স্ক, যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তারা টিকা পাবেন। সে হিসেবে দেশে এখন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি।
‘ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের সহযোগীতায় মুলত নিবন্ধনকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা এর সক্ষমতা সম্প্রতি বৃদ্ধি করেছি। এক সঙ্গে পাঁচশজন আগ্রহী বর্তমান প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করতে পারবেন।’
তিনি আরও জানান, এই পোর্টালে সাইবার আক্রমণ প্রতিহত করারও ব্যবস্থা আছে। এরপরেও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
‘সুরক্ষার বাইরে টিকা নয়’
‘সুরক্ষা’ ওয়েবপোর্টালে নিবন্ধিত না করোনার টিকা পাওয়া যাবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, ‘সুরক্ষার বাহিরে কোনো টিকা কাউকে দেয়া হবে না। মুলত টিকা সংক্রান্ত সব তথ্য ভবিষ্যতে যেন বিশ্লেষণ করা যায় তাই এ সিদ্ধান্ত।
‘ভবিষ্যতেও যখন দেশে কোনো টিকাদান কর্মসূচি হবে তখনও এই পদ্ধতিটিতে মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ কারণেই এর বাহিরে টিকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট তারিখে টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারলে কি হবে জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, ‘কারও টিকার তারিখ বা কেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয়টিকে এনকারেজ করা হচ্ছে না। এর কারণ, কোনো কেন্দ্রে কি পরিমাণ নিবন্ধন রয়েছে তার ওপর নির্ভর করেই টিকার ডোজ পাঠানো হবে।
‘এখন কেউ যদি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হন তাহলে অনেক ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এটি হতে দেয়া উচিত হবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, সাধারণত প্রথম ডোজের ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তি প্রথম ডোজ নেয়ার পর লম্বা সময় পাচ্ছেন। তিনি যে কেন্দ্র থেকে টিকা নিয়েছেন সেখান থেকেই দ্বিতীয় ডোজটিও গ্রহণ করবেন।
তবে কেউ প্রথম ডোজের দিন টিকা নিতে না পারলে সমস্যা নেই বলেও জানান খুরশীদ। বলেন, ‘তবে দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত না হতে পারলে সমস্যা।’
টিকাদান আপাতত নির্দিষ্ট হাসপাতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন পাচ্ছি সবচেয়ে কম দামে।’
ভারতের পর বাংলাদেশই সবচেয়ে কম দামে করোনার টিকা কিনতে পেরেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে দেয়ার জন্য টিকার ৭০ লাখ ডোজ প্রস্তুত।
‘দেশে এখন পর্যন্ত ৫ লাখের মতো মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। সে হিসেবে বলাই যায় বিপুল পরিমাণ টিকা এই মুহুর্তে আমাদের হাতে রয়েছে।’
কম দামে করোনার টিকা কেনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সময় মতো তৎপরতা চালানোর জন্যই এক কম দামে টিকা পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য